সুন্দর ঝলমলে, উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই একটা স্বপ্ন থাকে৷ সেক্ষেত্রে হলুদ একটি অন্যতম উপাদান যা স্কিনের যে কোন রকম সমস্যায় ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এছাড়া স্কিনের বিভিন্ন ধরনের রোদে পোড়া দাগ কমাতে সহায়তা করে হলুদ৷ যেকোনো ধরনের বাজারজাতও প্রোডাক্ট বা ক্রীম কে হার মানিয়ে দেবে হলুদের ব্যবহার৷ তবে দীর্ঘদিন ধরে এর ব্যবহার করলেই সে ক্ষেত্রে প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে৷ তাহলে আসুন জেনে নেই হলুদ দিয়ে কিভাবে নিজেকে আরও সুন্দর এবং জেল্লাদার করে তোলা যায়?
১ঃ- ব্রণ দূরীকরণে হলুদের ব্যবহার
ব্রণ হলে এবং তা আবার কমে যাওয়ার ফলে যে দাগ হয় হয় সেটা একটি অত্যন্ত চিন্তার বিষয়৷ এই সমস্যার বেশির ভাগ তাদের হয়ে থাকে যাদের মূলত তৈলাক্ত ত্বক তাদেরই অধিকাংশ ভুগতে হয়৷
কিন্তু এই সমস্যার সমাধানের জন্য হাতের কাছেই রয়েছে হলুদ৷ মূলত যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তাদের কাছে কাঁচা হলুদ একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান৷
এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো ত্বকের যেকোনো ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে৷ এছাড়াও এটি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে৷ এছাড়াও নিয়মিত যদি হলুদ মেশানো দুধ খেলে ত্বকের ভেতর থাকা টক্সিন বেরিয়ে যায়৷
এর পাশাপাশি কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়৷ যার ফলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল এবং প্রাণোচ্ছল দেখায় এবং বয়সের ছাপ কমতে থাকে৷
এর পাশাপাশি ব্রণের সমস্যা দূর করে৷ হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রভাবগুলো ব্রণ সহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়৷
হলুদ যেকোনো ধরনের প্রদাহের সাথে লড়াই করে৷ ব্রণের সাথে সম্পর্কিত প্রদাহ কিংবা লালচে ভাব এর চিকিৎসা করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে হলুদ৷
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
ব্রণের সমস্যা কমাতে ফেস মাস্ক হিসেবে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন৷
এক্ষেত্রে ১ টেবিল চামচ ময়দা, ১ চা-চামচ হলুদ, ৩ টেবিল চামচ দুধ এবং কয়েক ফোঁটা মধু লাগবে৷
এই উপাদানগুলো মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন৷
এবার এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করুন৷
তারপর শুষ্ক ত্বক হলে সাধারণ জল দিয়ে এবং ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় সেক্ষেত্রে উষ্ণ গরম জল দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিন৷
তারপরে যেকোনো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন৷
এই মিশ্রণটি মুখে লাগানোর আগে অবশ্যই কানের পিছনে লাগিয়ে একবার টেষ্ট করে নেবেন যে কোন কিছুতে আপনার খারাপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা৷
হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন এই জাতীয় সমস্যার সাথে লড়াই করে ব্রণের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে৷ কারণ এর মধ্যে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ থাকার কারণে ব্রণ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে হলুদ৷
আরো পড়ুনঃ- হলুদের উপকারিতা এবং অপকারিতা
২ঃ- রোদে পোড়া দাগ কমাতে হলুদের ব্যবহার
সারা সপ্তাহ অফিস কিংবা কলেজে দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের মতন গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সানবার্ন কিংবা রোদেপোড়ার সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা৷
অতিরিক্ত সময় সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকলে ত্বকের ওপরে এক ধরনের কালচে আস্তরণ পড়ে যায়, যেটাকে বলা হয় সানট্যান৷ মূলত যাদের শরীরে মেলানিনের অধিক আধিক্য লক্ষ্য করা যায় তাদের সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অধিক মেলানিন সৃষ্টি হয়৷
যার ফলে ত্বকে এক ধরনের কালচে ভাব লক্ষ্য করা যায়৷ তাই সানবার্ন কিংবা সানট্যান কমাতে অন্যতম একটি মোক্ষম উপাদান হলো হলুদ৷
এটি ত্বকের উপরের স্তরে পড়া যেকোনো দাগ থেকে ত্বককে মুক্তি দেয় এবং ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে৷
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
সূর্যের তাপে হওয়া সানট্যান দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো হলুদ৷
এক চামচ টক দইয়ের সাথে আধা চামচ হলুদ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন৷
এবার এই মিশ্রণটি ত্বকের উন্মুক্ত অংশে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন৷
১৫-২০ মিনিট পরে পানি দিয়ে হালকা হাতে এই মিশ্রণটি তুলে ফেলুন৷
সপ্তাহে তিন দিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে ট্যানের সমস্যা দূর হবে এবং নতুন করে পড়বে না৷
প্রয়োজন হলে এই মিশ্রণে লেবুর রস মেশাতে পারেন, সেক্ষেত্রে এটি আরও কার্যকরী হবে৷
তবে হলুদের ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একবার প্যাচ টেস্ট করে নেবেন৷ কেননা অনেকের লেবু থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অসুবিধা হলে লেবু ব্যবহার করবেন না৷
৩ঃ- ফাটা গোড়ালির চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার
হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন কিংবা খুব গরম কিংবা খুব ঠান্ডার সময় আমাদের অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো ফাটা গোড়ালি৷ এটি সকলের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়৷ পুরুষ-মহিলা সকলেই ফাটা গোড়ালির শিকার হতে পারে৷
মূলত পায়ের পাতা শরীরের ভার বহন করতে করতে যখন ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে বা হারিয়ে যায় তখনই পা ফাটার মতন সমস্যাগুলো লক্ষ করা যায়৷
দীর্ঘক্ষণ খালি পায়ে হাঁটা কিংবা দীর্ঘক্ষন জুতো পড়ে থাকার কারণে পায়ের ত্বক আর্দ্রতা হারায় আর মূলত এই কারনে গোড়ালি ফাটার মতন সমস্যাগুলো দেখা দেয়৷
এক্ষেত্রে হলুদ অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান৷ এর মধ্যে থাকা কারকিউমিনে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলি রয়েছে যেটা যেকোনো ধরনের প্রদাহ কিংবা ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
হলুদ এবং মধু ভাল করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন৷
এবার পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করে নিয়ে এই মিশ্রণটি রাতে শুতে যাওয়ার আগে কুড়ি মিনিট ধরে লাগিয়ে রাখুন৷
এছাড়াও রোজ গোসল করার আগে পিউমিক স্টোন বা সাবান দিয়ে অবশ্যই পায়ের গোড়ালি ভাল করে ঘষে নিন৷
এতে পায়ের গোড়ালি থেকে মৃত কোষ দূর হয়ে যাবে এবং পায়ের ত্বক তার উপযুক্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারবে এবং পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যার সমাধান হবে৷
দৈনিক যদি এটি ব্যবহার করতে পারেন এবং গোসল করার আগে তা পিউমিক স্টোন বা সাবান দিয়ে ঘষে নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যে পা ফাটার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷
৪ঃ- স্ট্রেচ মার্ক কমাতে হলুদের ব্যবহার
প্রেগনেন্সির পর কিংবা হঠাৎ মোটা থেকে রোগা হয়ে যাবার পর ত্বকে এক ধরনের স্ট্রেচ মার্কস লক্ষ্য করা যায় যেগুলো দেখতে খুব বাজে লাগে৷
সেগুলির নিরাময়ে একটি অন্যতম উপাদান হলো হলুদ৷ কেননা হলুদের মধ্যে উপস্থিত কারকিউমিন যেকোনো ধরনের ক্ষত কিংবা দাগ ছোপ নিরাময়ে সহায়তা করে৷
এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান গুলো ত্বককে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি দাগহীন রাখতে সহায়তা করে, তাই এক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ৷
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
নারকেল তেলের সাথে হলুদ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন৷
এবার এই মিশ্রণটি স্ট্রেচ মার্ক যুক্ত অংশে প্রতিদিন গোসলের আগে লাগিয়ে কুড়ি মিনিট রেখে দিন৷ তারপর ধুয়ে ফেলুন৷
এই ভাবে দৈনিক ব্যবহারের ফলে সাত দিনেই তফাৎ দেখতে পারবেন৷
স্ট্রেচমার্ক আস্তে আস্তে হালকা হতে শুরু করবে৷ হলুদ যেকোনো ধরনের প্রদাহ কিংবা ক্ষত ও দাগ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ তাই এক্ষেত্রেও হলুদের ব্যবহার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ৷
৫ঃ- বলিরেখা দূরীকরণে হলুদের ব্যবহার
ত্বক তিরিশের কোঠায় পেরোলো কি ত্বকের বলিরেখা জানান দিতে থাকে যে বয়স বাড়ছে আর সেটাই একজন মহিলার ক্ষেত্রে হতাশা হওয়ার জন্য যথেষ্ট৷
তাই ত্বক পরিচর্যায় আজ থেকেই হলুদের ব্যবহার শুরু করুন৷ কেননা হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলো বার্ধক্য প্রতিরোধে অর্থাৎ বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে৷
কারন হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন এ অ্যান্টি মুটেজেনিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উপাদান রয়েছে, যা ত্বককে ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলোকে কমাতে সহায়তা করে৷
এছাড়াও হলুদ যেকোনো ধরনের দাগ, হাইপারপিগমেন্টেশন, বলিরেখার সমস্যার চিকিৎসা করতে পারে৷ এগুলির ক্ষতিকর প্রভাব দূরীকরণে সহায়তা করে৷
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
কাঁচা হলুদের সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে এবার এটিকে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন৷
এটি মুখে লাগিয়ে তিরিশ মিনিট অপেক্ষা করুন৷
তারপর সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন৷
দৈনিক একটি ব্যবহার করুন তবে ত্বক থেকে বলিরেখা দূর হয়ে যাবে৷ এছাড়াও যেকোনো ধরনের সমস্যা থাকলে সেটিও কমে যাবে৷ হলুদ ত্বকের ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল করতে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে৷
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog